একটি আত্মহত্যা .... অতঃপর........

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ মোরশেদুল আলম আরিফ ২৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:৪৩:০০ দুপুর

আজ মনটা অনেক খারাফ। Arindam Saikat (Facebook ID) নামের কুমিল্লার একটা ছেলে রেজাল্ট খারাফ হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করছে। তার ফেসবুকের লাস্ট স্ট্যাটাস পড়ে অনেক খারাফ লাগল।

""এতো জিপিএ ৫-পাশের ভীড়ে,

আমার স্ট্যাটাস গুলো কী কারো চোখে পড়ে?

পড়বে না। পরার কথাও না।

যেদিন আমার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়বে এই নীল সাদার দুনিয়ায়,যেদিন আমার মৃত্যুর খবর পত্রিকায় ছাপবে...ঠিক সেইদিন হয়তো "miss you" #RIP হ্যাশট্যাগে ভড়ে উঠবে ফেইসবুক ওয়াল।

আমার সাথেই চলে যাবে আমার না বলা কথা গুলো!

এইটাই তো দুনিয়া। এইটাই তো একজন মানুষের মৃত্যু পরবর্তী অন্তস্টিক্রিয়া!

এটাই তো হেরে যাওয়া এক সৈনিকের প্রাপ্তি!""

নিঃসন্দেহে আত্মহত্যা মহাপাপ। কিন্তু আত্মহত্যার পেছনে কিছু নিরব হত্যাকারী লুকিয়ে থাকে।

জানিনা এইভাবে কত ছেলে মেয়ে আত্মহত্যার মত জঘন্য কাজটা বেছে নিয়েছেন।হয়তো কিছুদিন পর পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারব কতজন ছাত্র ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে।

নিঃসন্দেহে আত্মহত্যা খারাফ কাজ। কিন্তু কেন এই কাজ করতে হচ্ছে। যারা পড়ালেখায় তেমন ভাল না তারা এই কাজটা খুব কম করে। যারা ভাল তারা এই কাজটা বেশী করে। কিন্তু কেন? উন্নত দেশগুলোতে এই কাজটা অনেক কম একপ্রকার নেই বললে হয়। আমাদের দেশে কেন এই কাজটা বেশী হয়? বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা কি তার জন্য দায়ী না? কিছুদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী বললেন এইবার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে তাই পাসের হার কম। তার মানে আগের সময় গুলোতে সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন হয় নি?

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমি আগে একটা পোস্ট করেছি তাই আজ আর নতুন করে বলতে চায় না।

শিক্ষা ব্যবস্থা এত খারাফ হয়ে গেছে যে আজ শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিরোধী দলকে দেখানোর জন্য পাসের হার বৃদ্ধি করেছেন। যখন সমালোচনার মুখে পড়লেন তখন পাসের হার কমিয়ে দিলেন। শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি করাটা কি ঠিক? গতকাল একটা পত্রিকায় দেখলাম একজন ছাত্র ৫০ মার্কের পরিক্ষায় ৬৩ পেয়েছে। সমালোচনার মুখে পড়ার পর বলছেন "এটা হয়তো ৩৬ হবে, ভুলে উল্টা হয়ে গেছে "। ভুল হলে আপনারা কেন বোর্ডের দায়িত্বে আছেন? আপনারা ক্লাস ২-৩ তে ভর্তি হয়ে ১,২ শিখছেন না কেন?

জানিনা এইভাবে আরো কত ছাত্র ছাত্রী হারাতে হবে! শিক্ষা ব্যবস্থা কখন উন্নত হবে সেটাও জানিনা! শুধু এতটুকু জানি শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক না হলে আগামী বছর এরকম আরো আত্মহত্যার মত খারাফ ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে আমাদের।

আমাদের সমাজে আবাল প্রকৃতির কিছু প্রতিবেশী আমরা পেয়ে থাকি। অমুকের ছেলে এই রেজাল্ট করেছে আপনার ছেলে কি করেছে / শুনলাম আপনার ছেলে নাকি ফেইল করেছে। সব দুষ ভাবী আপনার আপনি ছেলেকে বেশী আস্কারা দিয়েছেন। এই কথা শুনে আভিভাবক তাদের সন্তানদের উপর বকাঝকা কিংবা মারধর শুরু করে। যা ছেলে কিংবা মেয়েদের মানসিকভাবে দূর্বল করে তুলে। একজন ব্যক্তি এক্সিডেন্ট করার পর তার আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে লবণ লাগিয়ে দিলে যেমন লাগে তার চেয়ে বেশী কষ্ট পায় ঐ সময়ে। আমি জানি না প্রতিবেশীরা এমন কি মজা পায় ফেইল করা ছেলে মেয়েদের পরিবারকে উস্কানি মূলক কথা বলে!

আমার প্রানপ্রিয় ভাই বোনদের জন্য উপদেশ মূলক কিছু কথা নিচে লিখলাম।

কৈশোরে-তারুণ্যে আত্মহত্যার একটি অন্যতম কারণ পরীক্ষায় ফেল করা। জীবন কখনোই কারও জন্য কেবলই কমেডি ছিল বা থাকবে তেমনটি নয়, মাঝেমধ্যে ট্র্যাজেডিও নেমে আসে।

জীবন হচ্ছে সফলতা-ব্যর্থতার পালাবদলের এক অবিরাম ধারা। কোনো একটি কাজে ব্যর্থ হওয়া মানে শেষ হয়ে যাওয়া নয়। এ জন্য আত্মহত্যা করাটা বোকামি। পরীক্ষায় ব্যর্থতা বা যেকোনো ব্যর্থতার পর কেউ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, কেউ তীব্র নেতিবাচক আবেগে বিস্ফোরিত হয় (এরাই আত্মহত্যার চেষ্টা নেয়), আবারর কেউ সাময়িক আপসেট থাকে মাত্র। কে কোন ধরনের আবেগীয় প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা অনেক দেহ-মনো-সামাজিক কারণের ওপর নির্ভর করে।

যারা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে বা হবে, তাদের মনে রাখা ভালো, পৃথিবীর অনেক সফল, বিখ্যাত ব্যক্তি পড়াশোনায় তেমন ভালো করতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন, স্টিভ জবস, বিল গেটস, এমনকি আইনস্টাইন।

যারা ফেল করেছে বা করবে, তাদের করণীয়

যারা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে বা হবে, তাদের যা যা করতে হবে:

১. অতিরিক্ত আতঙ্কিত হবে না—এটিই জীবনের শেষ নয় এবং তুমি একা ব্যর্থ হওনি। আরও অনেক পথ খোলা রয়েছে।

২. ব্যর্থ হলে হতাশ হওয়া, বিপর্যস্ত হওয়া, রাগ, ক্ররোধ, গ্লানি, অপমানে জর্জরিত হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। এ ‘শোক’ সয়ে যাওয়ার জন্য নিজকে কিছুটা সময় দাও—ব্রেক নাও। সময় সব ক্ষতের উত্তম মলম।

৩. তুমি এখন খুবই খারাপ অনুভব করছ। নিশ্চয় চাইবে না ভবিষ্যতেও তেমন খারাপ কিছু ঘটুক। তাই বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে ঘটনাটি পুনর্মূল্যায়ন করো, সৃজনশীলভাবে চিন্তা করো, আমি যেমনটি চাই, তেমনটি পেতে হলে আমাকে কী কী করতে হবে?

৪. কোনো একটি ব্যর্থতা দিয়ে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করবে না—ব্যর্থতা একটি ঘটনামাত্র। কোনো মানুষ ব্যর্থ নয়, তার কিছু চেষ্টা, কাজ ব্যর্থ হতে পারে।

৫. যদি তুমি দেখাতে পারো, যেকোনো ব্যর্থতাকে তুমি মোকাবিলা করতে পারো, তাহলে কেউ মনে রাখবে না যে তুমি ব্যর্থ হয়েছিলে।

৬. কিছু ঘটনাকে তুমি এড়িয়ে যেতে পারো না বটে, কিন্তু সেটি কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখবে এবং এর প্রতি তোমার প্রতিক্রিয়া কী ধরনের হবে, সেটি তুমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারো।

৭. নিজেকে বিচ্ছিন্ন করবে না—পরিবারের লোক, বন্ধুবান্ধব সবার সঙ্গে সংযোগ রাখো। গ্লানি, অপমান, কষ্ট চাপিয়ে রাখবে না। প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে থাকো। নিজের ওপর যেমন নির্ভর করবে, তেমনি শুভাকাঙ্ক্ষীদের ওপরও নির্ভর করো।

৮. নিজের যত্ন নাও—যা ভালো লাগে করো, সামাজিক যোগাযোগ বাড়িয়ে দাও, ভালো ঘুম দাও, পুষ্টিকর খাবার খাও, ব্যায়াম করো। কোথায় ও কার কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া যেতে পারে, তার একটি তালিকা তৈরি করো।

৯. আবেগকে ‘বোতলবন্দী’ করে রাখবে না। এগুলো যথাযথভাবে প্রকাশ করো।

১০. ভাবো, তুমি একাই কি হেরেছ? এই হারার জন্য সবাই কি তোমাকে অপছন্দ করছে, অবজ্ঞা করছে, তিরস্কার করছে বা দূরে সরিয়ে দিয়েছে? খেয়াল করলে দেখবে, অনেকেই তোমার প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহমর্মী।

১১. ঘটনাকে ভয়াবহ রূপ দেবে না—কোনোভাবেই আমার পক্ষে উঠে দাঁড়ানো সম্ভব নয় বা নিজেকে অতিরিক্ত দোষারোপ করবে না।

১২. এত ভগ্নমনোরথ অবস্থায়ও আশাবাদী হও। আশঙ্কা, ভীতির দিকে নজর না দিয়ে যা অর্জন করতে চাও, তার একটি ইতিবাচক মন-ছবি তৈরি করো।

১৩. ব্যর্থতার কারণ নিয়ে ভাবো—যা ঘটেছে, বিস্তারিত সব লেখো, সম্ভাব্য সমাধান কী, খুঁজে বের করো ও কী কী বাধা আসতে পারে, তা-ও লেখো।

১৪. ঘটনার পরও জীবন চলবে—ব্যর্থ হয়েছ, তার মানে কেয়ামত হয়ে যায়নি। জীবন-জগৎ আগের মতোই চলবে। তুমি পরিবর্তিত হবে, জীবন পরিবর্তিত হবে—কিছুই এক রকম থাকবে না। একই রকমভাবে তোমার এই দুঃসময়ও দীর্ঘস্থায়ী হবে না। সামনে তাকাও, উঠে দাঁড়াও, অল্প করে হলেও চলতে থাকো।

১৫. অনলাইনে বিভিন্ন পেজে মানসিক সহায়তামূলক লেখা থাকে, সেগুলো পড়ে দেখতে পারো।

পরিশেষে সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে উন্নত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করুন।

বিষয়: বিবিধ

৮৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File